Tuesday, September 8, 2009

রোমন্থন লিপি : ৪

কাঠ কয়লা পুড়ে ছাই হয় নির্লজ অন্ধকারে ইচ্ছের বিপরীতে পুড়ে তরতাজা রোদের সকাল
রহস্যকথা একাকী বতাসে ওড়ে ধীরে
যত পাখি উড়ে যায়; তত পাখি ধরা পড়ে

আমি তো কাঠ কয়লার সেজে পুড়ছি সকাল-সন্ধ্যা
রাত্রি ঘনালে দূরে যাবো না— যদি বেরোয় আগুনের লাভা

ইতি-অবসরে

পাতার সবুজ প্রেম, প্রাণে ক্লোরোফিল কার কাছে কে বাঁধা থাকে বলো চিরকাল
আমার হাতে বেঁধে রাখো তোমার নাকফুল

তুমি কি জানো; কারা ছিঁড়েছে সুতো কারা সেজেছে কবিয়াল
মানুষ মানুষের কাছে বাঁধা রবে আর কতদিন; কতকাল
দেখে নেয়া যেত তুমি ফিরে এলে—
ইতি-অবসরে কোথায় গড়িয়েছে কোথাকার জল

ভারাক্রান্ত দেহ

তবু অশ্রুতে পুড়ে ভারাক্রান্ত দেহ
তাই স্মৃতি তাড়িত ভোর হলে চারপাশে
ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দেই আলো—


তুমি ক্ষরণটুকু এঁকে দাও রোদের তাপে
ক্রমশ শংকিত হই; ম্লান চোখে চেয়ে
প্রসারিত করো চোখ পয়মন্ত রোদে
ভারাক্রান্ত দেহ পুড়বে না কভু সহে যাবে—
কাকপক্ষী জানবে না; তুমি পোড়ালে

রেখা

যতটুকু গ্রহণতা ফুরায়, তারচে’ ঢের বেশি হারায় আমি ঝরতে দেখেছি অশ্রু অতলরাত্রির পরে; অবেলায়
মানুষ চিরকাল চক্রবৃত্তে ঘোরে; আশাকাঙ্ক্ষায়
তারচে বেশি হলে তোমার স্মৃতি বেঁধে নেবো হাতের মুঠোয়

শোনোনি আগে আড়ালে-আবডালে কথকতা পোড়ে; ভাবায়
বেদনাহত হলে মনপাখি উড়ে বাতাসে— ঘরের কোণায়
গড়িয়ে পড়ে উষ্ণ লালা শীতরাত্রি পরে বসন্ত ছায়ায়
গোপনে তুমি ঝরিয়েছো জল চোখে, তটরেখায়
যতটুকু গ্রহণতা ফুরায়; শরীর কাঁপায়

Monday, September 7, 2009

শূন্যতা

আমি তো জলের শূন্যতা মেপে দেখিনি
তাই আয়নার সামনে তোমাকে খুঁজি বার-বার
পেছনে তুমি নেই; তোমার ছায়াকে পাবো না জানি—
তারপরও কেন যে বায়না ধরো অনুভবে
ফুটে কল্পনা; পোড়াও মুখ-মুখচ্ছবি
পাতার আড়ালে ঢেকে রাখো প্রবলস্পৃহা কিছুটা বুঝি

কেউ তো কখনো ভাবিনি আমাদের প্রাপ্তি দাঁড়ালো কোথায়
কোথায় শেষ হবে— কতটা ব্যাপ্তি
তুমি কি প্রতীক্ষাগুলো গুনে রেখেছো; নাকি কখনো ভাবোনি
কখনো এমন হবে না জেনে চোখে শূন্যতা কভু মেপে দেখিনি

স্বপ্নভ্রম

রোদে হেসেছে উঠোন সাথে হেসেছো তুমি—
ছুয়েছো বরফগলাজল; শুষে নিয়েছো তাপদাহসহ
                                       অবশিষ্ট রোদ
কত স্বপ্ন স্মৃতিভ্রমে উড়ে নিঃশ্বাসে জ্বলে দেখো
                                  ছাইহীন মোম

আমি তো মুদ্রাদোষে একা— পেয়েছি শূন্যতা
তুমি গুছিয়ে রাখো তোমার মতো করে রোদজল
মুঠো ভরে রাখোনি আমার জন্য স্বপ্নশূন্যতা

এসো ২

তার পদচিহ্নে হেসে ওঠে মাটি কেঁদেছে ধুলো ক্রোধে
মেঘে-মেঘে ঘনঘটা আকাশ যে পাশে
তাই
তোমার হাতে, পাশে রাখা কাগজের ফুল
বাদে
জলাতঙ্ক জাগে জল ছুঁতে গেলে, তোর ঠোঁটে লোনা জন্মে
প্রায়ই
চোখের ক্লান্তি কি শুষে নেবে কেউ, তারপরে…
তবে
শরীর ছেঁকে নেবে যারা; পুনর্বার তারা— তুমি কি পূর্ণতা
পাবে
কতকিছু ভাবি— কিছু মনে থাকে না, স্বভাবে

দেয়ালকাচ

যদি বলার কিছু থাকে সাহস করে বলো বুকে হাত রেখে বলো ভাবো— ভাবো আরো নিঃশ্বাস ছেড়ে; ভাবো আরো— আরো একবার জেনে রাখো তোমার পাশে দাঁড়ানো তিন-তিনটি নিদ্রা তাড়ানো গাছ

যদি বলতে নাই পারো; ঘুরে ফেরে চলো; একটু বুঝতে দিও… জানি
তোমার বুকে স্বপ্নপাথর, হাসিফুল ঝরেছে কবে তাই জমাট বাঁধা দীর্ঘশ্বাস।দেয়াল টপকাতে যেও না যদি না-বলা কথার মতো ভেঙে যায় জানালার কাচ

আয়না

তুমি যদি তাকাও ঋণী তবে চোখ সন্ধেবেলা ঘুরে-ফেরে নামে গভীর নীরবতা
নীরবতা জানুক ভালো-মন্দ কথা; অনুতাপ
তোমাকে একা রেখে ফুলের টবে

তুমি যদি ফিরে এসো; এসো ঠোঁটে-ঠোঁট রেখে
যত হাসি লেগে থাকুক আজ আয়নার ফাঁকে

এসো ৩

ওহো তুলোমেঘ একটু পরে এসো, উড়ে এসো… ঘনরঙে ছুটে এসো ধুলোকণা সেচে; বাতাসে ঘুরে এসো দেহকোষ বেয়ে ওহো তুলোমেঘ দাবানল পুড়ে এসো রোদ-জল হেঁটে এসো খোলা আকাশের নিচে— এবার দীর্ঘবর্ষারাত পুষে এসো ঢেউছায়া খুলে এসো ডোবা-জলে ভেসে ওহো তুলোমেঘ যদি আবার ফিরে এসো তবে বৃষ্টি সেজে

তালু

সর্বস্ব গোপন রেখেছো হাতের তালুতে তাই দ্বিধা-দ্বন্দ্ব যত সাতপাকে ঘুরে
ফিরে এলে খুলে দেবো মুঠোহাত
দেখবো কিভাবে তুলে নাও পূর্ণতা
ছেঁকে নাকি ছেটে; তুমি তো মুখ ফুটে কিছু বলোনি
দাঁড়িয়েছো সরোবরে দূরত্ব রেখে মনে হয়
                                                  দূরদেশে

সর্বস্ব গোপন রেখেছি; তাই দেহ পুড়ে শিহরণ তুলে
ফিরে যাবো না বলে গুনে রাখি পথ, গেঁথে রাখি ছায়া
তোমার আউলাচুলে; কার সৌরভে বিমোহিত হলে
ছুঁয়ে দিলে হিমদেহে বরফ গলে এই শীত বরফের দেশে

নারী হয়ে গেলে এতক্ষণে

তুমি; তুমি এতক্ষণে নারী হয়ে গেলে আয়নার সামনে
চোখ তুলে দেখো কার ঠোঁটে লটকানো আছে শ্রাবণের মেঘ
ভাবলে অর্ধেক দেহ পুড়ে বৃষ্টির জলে


দিনে দিনে ফুল-পাতা ঝরে; হলুদ ফুলের ঘ্রাণ তুমি
চুরি করে নিলে-বিষণ্ণ বরষায় একা দাঁড়িয়েছি ঝুলবারান্দায়
দেখতে-দেখতে তুমি! তুমিও একদিন বুড়ো হয়ে যাবে

ব্যবচ্ছেদ করো মনে মনে

পাশ ঘেঁষে বসার গল্প কবেই হয়েছে অজ্ঞাত, তুমি এড়িয়ে চলো চুপ-চাপ সেই মতো করে সব কিছু বুঝি গেছি কবেই দেহের উপর নেই কারো অধিকার; তীব্র বেগে ধাক্কা লাগে অন্তরে— মন রাত্রিকানা। স্বপ্ন ফুরিয়ে গেলে রাত্রি দীর্ঘ মনে হয় না আশা দু’রকম এগোলে স্বপ্নগুলো রুদ্ধশ্বাসে  ফুটে গোপনে, পাশ ফিরে বসার গল্প যারা বলে তারা কি মূর্খ?
তোমার ভালোবাসা সন্ধেবেলাকার আহ! বসন্তে হও স্নাত জলের বাগানে এবার দীর্ঘায়িত করো চোখ— ব্যবচ্ছেদ করো ভ্রান্তি যত মনে মনে

আমার যত ক্রোধ ওই ছয় তলায়

দুলছে যত ছায়া                  বিষণ্ণ আবছায়া
         অদৃশ্য জীবনের গ্লানি দেখি চোখে
হাতের রেখায় শিখি             ভাগ্যই নেই দেখি
         ফ্রেমে বাঁধা কার প্রাণ; কার বাঁধা শিঁকে
কতটা ফাটে রোদ                 কথায় যত ক্রোধ
          বুঝি না কেন সংশয় হাত বাড়ালে
আড়ালে অশ্রু ফেলে               স্বান্ত্বনা খুঁজে নিলে
           তৃষ্ণা মিটে না কভু বৃষ্টির জল গিলে
আঁধারে যত স্মৃতি                  দুঃখ নয় দুর্গতি
            তারপর কিছুই তো রইলো-না বাকি
স্মৃতি বয়ে যায়                       মায়ায়; কান্নায়
        আমার যত ক্রোধ ওই ছয় তালায়

একা

স্পর্শ ছাড়া কারা হারিয়েছে দিক, কে হয়েছে কতটুকু ঋণী তুমি দমে-দমে বাঁক নাও পথ; নতুন করে ভেবে

তাই মুষলধারে ঝরেছে বৃষ্টি, শরীর কাঁপে উত্তাপে
ছুঁয়েতো কভু দেখিনি

রাত্রির ফাঁকে আনমনে ভোর

তোমার পায়ের কাছে রাত্রি হেলে গেলে আমি রাত্রি কুড়োতে যাবো তোমার পাশে
বার-বার বলি একবিন্দু জল স্পর্শ করো না উজবুকে

সাবধানে ফিরে এসো, চেয়ে দেখো আনমনে
চাঁদের গায়ে কিভাবে উষ্ণরাত্রিকে শুষে নেয় ভোর
যেভাবে পাশ দিয়ে শুয়ে ছিলো বৃষ্টির শরীর
তোমার নভোমুখে


তুমি তো শুঁকে ছিলে অনায়াসে জ্যোৎস্নারাতের নিঃশ্বাস
এবার বলো তো দেখি—
চাঁদ-তারা একত্র হলে কিভাবে ঠোটে-ঠোট চাটে

পুরোটা চুরমার

পুরোটা দেহে জমেছে ক্রোধ, তুমি হয়েছো শীৎকারে ঋণী দেহ বেয়ে উঠে ছিলো ছিন্নভিন্ন ঘৃণা; দুঃখ ফুটাতে পারিনি
কাঁদতে চাও বারবার, আমার দু’চোখে নেই একঁফোটা পানি

এতদিন কেউ দেখেনি মনোবনে জ্বলছে কত হাহাকার
তুমি ঘুরে দাঁড়াতে এসে হয়েছো চুরমার

রাতকাহন

রাত হলে অন্ধ হয়ে যায় চোখ ঘনালে আমিও চিবোতে থাকি স্মৃতি…
রাত্রিগভীর হলে আমিও গর্ভবতী হই
বেদনার বীর্যপাত সেরে চলিষ্ণু বিলাপে
গর্ত খুঁড়ে চোখ— আহ্লাদি তৃষ্ণা যত একে-একে
                                                         জাগে
রাত্রি গভীর হলে তুমি পুঁতে রাখো বেদনার ঝুড়ি
জ্যোৎস্নাকে কি কখনো ধরে রাখতে পেরেছো; তাই
                         ভাবনাকে বারবার ভেঙে দেখি

স্বপ্ন

আর সে পথের নিয়ড়ে কান ধরে শুনেছি ভিন্ন মৌনতার দ্বীপ ঘিরে ইদানীং ছুটছো চরকির টানে
ছুঁতে ছুঁতে নির্মাণ করেছো হৃদ্যতার কুটির
ড্রাগনের চামড়ায় আবৃত করো স্বপ্নমাখা তুলতুলে শরীর
না হয় পিঁপড়ের কামড়ে কামবেগ হতে পারে
আনন্দ নিয়ে ক্ষতচিহ্ন ভরে যাবে রূপালি মুখ

পথরেখা

পউষের হাড়ি থেকে বেরুলো যে বাতাস, সে কী-না স্বজনতা পেতেছে শিশিরের সাথে; আমি শিশিরের
রেখায় দাঁড়িয়ে ছুঁতে চেয়েছি বাতাসের তত্ত্ব
তার আগেই রূপ লতার মতো ঢুকে গেছে
                     আমারই গোপন মাংসের ভাঁজে—
রক্তনালী বিক্রিত হলে ভাবালুকথার কলকব্জার
স্রোতজলের বাহারী তিলক পরিয়ে দেবো অই
                                           রোদপথের ঠোঁটে

ইচ্ছা

জানি পথের ভিড়ে এখন রোদপথ হারিয়ে ফেলেছি আর আবদ্ধ হয়ে পড়ে থাকি সব সুতোজালে… তবে কেন?
কোন বিলাপের মত্ততায় করিলে কাঙালপনা
হয়তো-বা দীঘল সময় পচা ডিমের খোলস হয়ে
নিরলে কথা বলবো আকাশের প্রান্তে
নয়তো যন্ত্রণায় কুঁকড়াবো চৌদিক কম্পাসের মতো

সান্ত্বনা

সব পথ পরিভ্রমণ করেছি বলে নতুন পথ খুঁজি জল থেকে উঠে ভাবি এ তো ছিল সব আদি অন্ত—
                               অহমের দহন প্রকাশ
গন্তব্যে ফিরছি কলঙ্কী সেজে, কলঙ্ক তো আমারই ঘাড়ে
মল্লিকার কলঙ্কের মালা গেঁথে রেখে দেব শুভ্র পাতায়
সব গ্লানি ধুয়ে নেবে যৌবনের স্রোতধারা জল

ধ্যান

তাকাও তুমি? চেয়ে থাকো ফুসফুস তুলে রাখো কোষ— থ্রম্বোসাইটে
আমি মাইটোকন্ড্রিয়ার ধ্যানে আবদ্ধ— তুমি
প্রোটোপ্লাজম হয়ে বিচরণ করো ফুসফুসে

একত্র হবে দেহকোষ, জেনে নেবে মাইটোসিস-মিয়োসিসের
চতুরতা। কত প্রশ্ন জমা হলো ডিম্বকে, আমি যৌবনে শিখেছি
বাইশ জোড়া ক্রোমোজোমের অজানা কথা। আর— একজোড়া
ক্রোমোজোম আজো তোমার জন্য একপায়ে খাঁড়া

খোঁজ

কতদিন জেগেছিলে চোখে
তারপর ঠিকানা পেলে নির্বাসিত বুকে

বহু রাত অবসাদে নিদ্রাস্বপ্ন হলে
কৌতূহল বেড়ে গেলো আলুথালু চোখে
বর্ণিল স্পৃহা নিয়ে জেগে ওঠে যত ঘূর্ণায়মান অতীত
তারও অগোচরে মৌন অপবাদ ছেঁটে খায়

কতদিন কেটেছে ভ্রান্তি ছুঁয়ে
কত প্রহর বুঁদ ছিলেম ঠুনকো গ্লাসের তলে
আজো তৃষ্ণার্ত হই সরীসৃপের লেজে
খোঁজ করি সোনালি ভবিষ্যত

আর ইদানীং দীর্ঘ বিরতিতে ফুটেছে
তোমার চোখে কত রকম আশা আর ভাষা

অজানা কথা

দাহতার প্রাজ্ঞতা শিখেছি আগুনের আঁচে রোদের প্রখরতা সহেছি ধীরে—
একজন জ্যোতিষের কাছে জেনেছি হাতের
মারপ্যাঁচ— রাশিচক্রের অজানা কথা
একজন নৌকোমাঝির কাছে শুনেছি
জলের হাওয়াতে পালতোলা আর
বণিক শিখিয়েছিলো স্বর্ণের চতুরতা

শুধু আজানা রয়ে গেলো তোমার
হৃদয়ের গোপন কথা

পরিমাপ

স্বপ্নের প্রজনন জমা হলো ল্যাম্পপোস্টে অস্তিত্ব নিভু নিভু কেরোসিনে… নিদ্রাহীন সার
অল্পসল্প ঘুমচোখে চর্বিত করেছি চেনা সুর
                                 সুখাভাব চেহারা…
নোঙর পেতে রাখি নিলিপ্ত ছায়ায়, লুপ্ত কথাগুলো
ঠিকানা পেল— ছ’আনা স্টিকের অতলে

যৌন কৌতূহল দেখি কীর্তনখোলা নদীর
উর্মিরা আঁছড়ে পড়ে হাতে, নীলাভ সন্ধ্যার ঘোরে
ঝরে গেছে যত ক্রোধ; শুকনো পাতা হাটে— থেমে গেছে হাওয়া
তারও ভ্রমে উৎকীর্ণ সাধের বারো আনা শরীর—
অচেনা পথে চার আনা পুঁজি করে বেঁচে আছে যারা
তাও একদিন হারিয়ে যাবে চিরস্থায়ী ঘুমে

ল্যাম্পপোস্ট নিভে গেছে ঘুমে, চেয়ে দেখি সবি অন্ধ; অন্ধকার
এখন কার সাথে কথা বলি— তবে তো নিদ্রাটাই সার

অচল মুদ্রা

নিরবধি শূন্যতার সত্তাকে অযথাই কাঁপায় এ প্রশ্নগুলো দাঁড়ানো মধ্যবর্তী কালের কথায়
তোমাকে নিয়ে কিছু লিখতে চাইনি— তবুও ভাবনায়
তুলে রাখতে চেয়েছি সব কথা দিনের কল্পনায়
অতঃপর ছবিগুলো বোবার মতো বারংবার উঁকি দ্যায়
ছুঁতে চেয়েছি শ্রাবণের বৃষ্টি কিংবা তোমায়

যত ডুবে থাকো জলমালতি— নিদ্রাজলের কথায়
দেখতে দেখতে বয়স বাড়ে, কত স্মৃতি অনিচ্ছায় হারায়
হারাবে না আমাদের স্বপ্নগুলো অচল মুদ্রায়

যদি চাও বলো—
কাল প্রাণটি পোষ্ট করে দেবো তোমার ঠিকানায়

অঙ্কন

আঁকো দেখি সোনালি রোদ গুণগতমান যাচাই করো তো শুনি
সূর্যের হাসি চিহ্নিত ছায়ার
প্রসারিত করো উদাসীন চোখে—
                                  বিষণ্ণ বাতাস
দু’হাতে ছিঁড়ে ফেলো মৃত্তিকা কিংবা
নিঃসঙ্গ ভাসমান রাত

ক্ষরণ

হাতড়ে ওঠো জরাতুর দেহ, ক্রোধে আক্রোশে সৃষ্টি করো জবুথবু ভাষা; আমি প্রসারিত দ্যাখো ছায়াদের সাথে। দমকা হাওয়া আর ভাসা-ভাসা
চোখে হারিয়ে ফেলেছি প্রাণ,ক্ষয়ে যাওয়া ক্রোধে। ফোস্কা পড়া জীবনের
গতিপথে পরিত্যক্ত ভোর। স্বপ্নীল প্রতিবিম্বগুলো একত্রে ছুটে যায় রোদে,
সময়ের পা ছুঁয়ে প্রসারিত নাভিশ্বাস—বিভাজিত চোখে ছলের কল্পকথাগুলো
তুলে রাখি খোঁপায়। শুদ্ধস্বরে যাহা ভাবো তা হয়তো অলক্ষে ঘুমিয়ে
থাকে শ্যামের লীলায়।প্রস্তুতির সুরত জমানো হরেকরকম মুদ্রায়।অলিন্দে কল্পনাগুলো জমা ছিলো এক-একটি কৌটায়।


দিনের লিপিতে কাঁপছে সবি— দুটি কৌটোয় জমানো ছিল আমাদের
পুরোনো রূপকথা। তবুও অশ্রু ভারাক্রান্ত দেহ; মুহূর্তগুলো রাশি-রাশি
শূন্যতায় ভরা।

পাথর-স্মৃতি

আমি পাথর কুড়াতে জানি পাথর খোদাই করতে জানি না
পাথরের মতো দুঃখকে শক্তপোক্ত করে রাখি
দুঃখকে পাথর বানাতে পারি না
শুনেছি পাথর ঘষলে নাকি পাথরও ক্ষয়ে যায়
কিন্তু পাথর থেকে আগুন তুলে নেয়া যায় না
পাথর-অন্তরে আছে অগ্নি নিরবধি—
যারা অগ্নিভীত, ভুলেও যেও না তারা পাথর-খনিতে
আমিও যাব না আর পাথর কুড়াতে

পাত্র খুলে পড়ে যায় সব

পাত্র খুলে পড়ছে সব সম্ভবত স্বাদ-আহ্লাদ সাথে কিছু গোপনতা, আমিও জানি না কতটুকু পাবে ঘ্রাণ তার সাথে মিশে থাকা ক্ষমতা অক্ষমতা। অপেক্ষা কেবল রয়ে যায় পাত্রের গায়ে, ফলে যদি চলে আসে গ্রহণের স্বাদ খুলে যাওয়া পাত্রের আগে, আমি সেই স্রোত বেয়ে অনুসরণ করে যাব আলপথ বেয়ে। তাই সহসা গলে যায় তৃষ্ণার্ত ঠোঁট অপেক্ষা কেবল থাকে শেকড়-বাকড়ে। সবাইতো সময়ের কাছে নতি স্বীকার করে, আস্তে আস্তে বয়সও বাড়ে; আমি পড়ে থাকি একা ভুলের ঘোরে ভূগোলের পরে

নিদ্রাপাঠ

শ্বাসের ভেতর আড়াল হয়ে যাও যেমনি নিঃশ্বাসের অতলে ডুবে থাকে প্রশ্বাসের ছায়া, বিরহের করুণ সুর— ভাবনার গহ্বরে জেনেছি তুমি হবে আতশি কাচ।তা না হলে তোমার সামনে দাঁড়াতে এলে আমার মুখ কেনো আটকে যেতে চায় শিকে, নিমগ্ন হতে চায় প্রতিটি কোষ যেন খুলে পড়বে এখনি তোমার শরীরের প্রতিটি ভাঁজ হতে ভাঁজে। আর এখন তুমি আড়াল হতে শিখেছো মেঘের কাছাকাছি হেঁটে, তবুও স্মৃতি যত দুলছে দূরবনে; দূরের বাতাসে। একসময় নিকটে ছিলে, এখন আড়াল হলে সময়ের ব্যবধানে।তাই কথার ইঙ্গিতে যতটুকু প্রাজ্ঞতা শিখেছো, তারচে’ বেশি অজ্ঞতা রেখে দেয়া যাবে কথার তোড়ে নয় গূঢ়নিদ্রাপাঠে

বিকিরণ

ব্যথিত হলাম তা জেনে পাঁজরের নীচে                                       জমেছে শিহরণ
যারে খুঁজতে গেছি দূরে— তার চোখে বিকিরণ
চোখ ভরা বিষ; অবিরত ক্ষরণ
ফলে রোদে পুড়ে বন

মনে পড়ে কুয়াশারাতে অভিমানী শীত
বোবাজলে মাগুরা নদীর পাশে কলঙ্কিত প্রেম
আমার তৃষ্ণার্ত জিভের ফাঁকে নীরব জল এলে
এখনো মাঝে মাঝে নদীপাড়ে জোনাক জ্বলে

অস্থিরতা

অস্থিরতা কেন এত বেশি তাতায় আমি লুকিয়ে রাখি মুখ—
অচেনা ঠোঁটের ধারে; লতা-পাতায়
তুমি এলে অস্থিরতায় ঠোঁটে জল পোড়ে
                               ফেনা থেকে যায়


ওইখানে আলোকরশ্মি রঙধনু মেখে
তুলে নিচ্ছে ঘ্রাণ, তোমার দ্বিধায় রোদ আজ
ত্রিশফুট নিচু হয়ে খুলে ধরছে আলোর বিচ্ছুরণ
আমি রোদের তিক্ততা পান করে তৃষ্ণা মিটাই
কেউ তো জানে না আসলে অস্থিরতা কেন এত বেশি
হিসাব মেলাতে শুধু তুমি দোটানায় স্বপ্ন পোড়াও

রোমন্থনলিপি

তবুও দেখো— কথাগুলো রয়ে গেলো রেখায় দূর থেকে উঁকি দ্যায় আবছায়া… কিংবা দেখায়
তাতেও সহে যায় স্মৃতি, এমনি— অযথায়

পরে গেল কথা রমণীর অষ্টাদশী তুলতুলে গালে
সাতপাক ঘুরে হেঁটে গেছে যারা, যন্ত্রণা গিলে—
খেয়েছে মলিন হাতে; জানি স্মরণ আসবে না তা— ঝুলে
যাবে চোখ, বৃষ্টির স্যাঁতস্যাঁতে জলে

কেননা যার জন্য পঞ্চপ্রহর একহাতে ধরে রাখি…
একাকার হয়ে নির্বিঘ্নে ঝরে অশ্রুসিক্ত আঁখি
এপাড়-ওপাড় দুইপাড়, পাড়ি দেই সখি
বলো তো—
পুলসেরাত উত্তরণে এখনও ক’হাত বাকি

রোমন্থনলিপি ২

ওই শব্দীগুলো উঠে এলো বাঁকে উৎসের ঢেউ ভাঙা দোলাচল বুকে—
আমি ধ্যানে রাখিনি— শুধু কম্পাংক মাপি


দূরে বাজে সুর কান পেতে রাখো, দেখবে মূর্ছনার
আওয়াজ ভেসে ওঠে প্রতিধ্বনি সুরে


পিছলে যাবে জানি পা; কথাগুলো তবুও জপি
তবে বলতো রহস্য ঘোর থেকে তোমার শরীর
কতটুকু উষ্ণতা পেল, দাঁড়িয়ে আছো তবে— ক’হাত দূরে

সন্তাপ

কী রকম স্তব্ধতা ছুঁয়েছে কুয়াশার রাত যত বিষণ্ণতা ঝিলিক দ্যায়— জেগে থাকা দূর্বাঘাসে
আমাকে আত্ননিবেদিত করে চেনাফুল—
হাসনাহেনার ঘ্রাণ, কতটুকু চতুরতা পেলে
দেহমিনারের সাথে কথা কয় কুয়াশার রাতে
                                               অসংখ্য সন্তাপ

টান

দাগ টেনে দিলে যে সুবর্ণকালে আমি তার বৈকুন্ঠে ছক রেখে যাই
সামান্য মন্ত্রণা হৃদকোষে রাখি, বিয়ানোর
প্রাক্কালে শ্রাবণের উচ্ছ্বাসের বাণী ছিল লিখা
চোখ তার বরিষন নামে—
তবুও মালা সাজাই সোহাগীর পুরঃগৃহে

অঞ্জলীতে যাহা পাই ব্যথানুভবে
তাতেও থাকে বৈচিত্রের সুখ, কেননা
বসন্তের ভ্রমণ শেষে হেঁটে গেছে যারা
ছুঁয়েছে ফুলের লাবণ্য, সুবাস
তাদের করুণার পাশে নতজানু আমি
কোন পথে থাকে কৃপা, সে অজানা পথেই
শুধু হাতছানি দেয়

স্রোত

তোমার কাছাকাছি এলো আমার কাগজের নৌকা স্রোতের বিপরীতে বৃষ্টি আর এক টুকরো মেঘ
আর আমরা যারা স্বপ্ন ভেঙে জেগেছি দেখি ক্ষয়িত
মুখাবয়ব আর জ্যামিতির রূপে প্রবাহিত সব
মেরুকরণের শুভ্রতা ঘিরে, আর স্পর্শের বিষমতায়
অভিষিক্ত আমি ইন্দ্রিয়পথে মিশে গেছি সীমাহীন কিনারে
যারা অজ্ঞাতসারে গিয়েছি কিনারে দেখি মিশে গেছে সব
স্রোতের বিপরীত স্রোতে

কথকথা ২

অবাধে হেঁটেছি আমি বালুর পাঁজর ঘেঁষে, বালুকাপথ তার সরুকথাগুলো উড়ে যেতে চায় বলে জানান দিচ্ছে হৃদপোড়াকথা ক্লান্তি আমি মায়ার আদলে ছুঁয়ে যাই বালি আর তোমার শরীর, বেদনার্ত রোদশিখায় পুড়ে যাবার ভয় থাকে, পুড়ে যায়, পোড়া দেহ-সামিয়ানা তবুও তো বালির পথ ধরে হেঁটে চলি ধুলোময়তা সাথে নিয়ে, শূন্যতা ঘিরে

কোন পথ ধরে যাব

অচেনা পথে ঘুরে-ফিরে আসি ফেরার কৌশল জেনে প্রত্যাবর্তনে খুঁজি স্মৃতিপথটুকু ক্লান্ত পালকের কাছে তার চিরায়ত মন্ত্রে আপ্লুত করে দেয় হৃদপিণ্ডসহ তৃষ্ণার্ত গহব্বরে, তাই শীতপাখির মতো খুঁজি ভোরের রোদ পোহাবার ডানা… যে-পথ ধরে চলে গেছে কথা অরণ্য সবকিছু গ্রাস করেছে… এখন শাদা পোশাকের দল… ভাবি দৃশ্য যখন বার বার ফিরে আসে তাই ওই পথ ধরে হেঁটে যাবো গ্রহণের আগে ও পরে

কৌশল জেনে

সৌন্দর্যের ইন্দ্রজাল বুনে নিরর্থক প্রহরগুলো আঁবুবাকু করে ধুলোর ভাঁজে প্রভাঁজে হয়তো শাদা জামার সরুপথ ধরে মৌন নিঃশ্বাস ছুঁড়ে দিতে পারো মাংস আর লোমের মোড়কে লোভচোখ নুয়ে যাওয়ার আগে দেখি তোমার ভ্রু-চোখ কাঁপছে বিস্ময় নিয়ে মুহূর্তগুলো আঁকা যেত জলের গায়ে কিন্তু জলের স্মৃতি যত গোপন রাখতে চাই দেখো কেমনে ধেয়ে আসছে সব বুকে আর হুকে ক্লান্ত হলে মুখাবয়ব ধুয়ে নিতে পার বৃষ্টির জল কিংবা নোনতা জলে তবুও তোমার চোখে খুঁজি আশা আর কিছু দিবসের আলো ছলে কৌশলে

বৃক্ষের বল্কলে

তোমাদের শরীর পুজো করি বরষার পাত্রে ঢেলে ও ধ্রুবজলকণা বৃষ্টিভাবিত ঝরনার শরীর, তোমাদের দ্রোহকথাগুলো একত্র হলে চূর্ণবিচূর্ণ কথাগুলো এঁকে রেখে দেবো ঝাউগাছের বল্কলে সারি-সারি টবে হেসে ওঠে জুঁই,স্খলিত হাসির ব্যঞ্জনায় ছুটতে বাতাস আর বাতাসের মোড়কে আটকে গেছে হৃদ্যতার খোলস; নির্জনে বেড়ে ওঠে বৃক্ষরাজি…বরষাঋতু… আহা!...রকমারি সৌরভে বিমোহিত আমি মল্লিকার কলঙ্কিত ফুল। বরষাঋতু নাকি বৃক্ষরোপণের উপযুক্ত সময়! আমাকে জাগিয়ে তোলে শাড়িপরা গাছ। সেই ক্ষণে অজল চোখের ষোলকলা জেনে আমিও রোপণ করেছি কিছু স্মৃতিগাছ আর ইদানীং আমার স্বপ্নরা উড়ে যায় শাড়িপরা গাছের সাথে, নির্জনে কথা কয়… আমার অনুজ যারা যেমন আমপাতা জামপাতা বাঁশের করুল। দেহগাছ স্মৃতিগাছ তার সাথে শাড়িপরা একত্রে বেড়ে ওঠে জানি— জানি তাতে ঋণী আমি ওই নিমগাছের মূলে। তবুও তো তোমাদের শরীর পুজো করে যাবো, কেননা আরো কিছু চূর্ণকথা লিখতে হবে আমাকে বৃক্ষের বল্কলে


জিজ্ঞাসা

নিয়তি আমাকে প্ররোচিত করে হরহামেশা জীবনের করাতকলে বেঁধে—
শব্দ আর ভাষার রকমারি প্যাঁচে আজো
রয়ে গেছি আমি অবোধ বালক

ওগো প্রত্নতাত্ত্বিক, মাটি খুঁড়ে বের করো
অজ্ঞাত করোটির কিছু পাথর আর শিলা
ওগো হৃদরমণী, হৃদতাত্ত্বিক ভাষা দিয়ে
হৃদয়ের দাবিটুকু আজো কেন ফোটাতে পারোনি

গ্লানি

গাছেরও নিদ্রা থাকে, পাতার থাকে ওড়ার সাধ রোদের থাকে হাসির ঝলক, ছায়ার থাকে মায়া
তাই রোদের গায়ে মিশে আছে ছায়া হয়ত নিরাশ্রয়ে
শেকড়-বাকড়ের সংশয় ছিল আগে, এখনও জাগে—
ঝড়ের গতি বেড়ে গেলে

কিন্তু মেঘের গর্জনে কখনো আকাশ ফাটেনি
গাছের নিদ্রা আরো কিছু বাড়ে
মেঘের কষ্ট আছে বৈকি, আমার চোখে গ্লানি

বৃথা গাঁদাফুল

দূরে কেনো ফেলে রাখো তোমার                              চোখের জ্যোতি
তবে কি আমার নিদ্রাপর্বে রাধাকৃষ্ণ ঢেউ
ঋতুতে ঋতুতে বুঝি শুষ্কপাতা বৃথাগাঁদাফুল
সুতোজলে বাঁধা মৌরি… মৌ
সামনে দাঁড়ালে বুঝি লক্ষ আকুতি
ডানাঝাড়াস্মৃতি
তাই
হেঁটে যেয়ো একশ কদম গন্তব্যহীন, দেখবো পরিমাপ
তুলে রাখবো পাতাঝরা ক্ষণে তোমার পদচিহ্ন-ছাপ

বিবিধ

ওইখানে গোটাও অভিপ্রায় যত পাঠ করো দু-হাত নেড়ে... যতদিন মিশে-থাকা যায়
                                            রোদের তীব্রতা গিলে

তুমি আর আসবে না—
ফিরবে না কভু একথা বলোনি যে আগে
তাই কতটা অপেক্ষা করতে পারে বলো বহমান স্রোত

মেঘে মেঘে এখনো ভাবনা জাগে তবু মনে পড়ে না
এত যে মিশে-থাকা কার জন্য অস্পষ্ট বেড়াজালে

বিবিধ ২

তুমি কি জেনেছো কিভাবে সময়ের ব্যবধানে স্মৃতি ঝরে পড়ে হিম বাতাসের তলে
আর রক্তকণাগুলো আটকে গেছে অদূরে ওই
ছেঁড়া-শার্ট আর ঝিনুকের খোলে
নিঃসঙ্গ সময়গুলো এখন বড় দীর্ঘ মনে হয়
                            ভাবলে আচানক লাগে
তবু ভাবি—
তুমি ভুলে গেলে মেপে নেব নিঃসঙ্গ না-হওয়া
আসলে কি ভালো; যতবার যাত্রাপথে কুড়িয়েছি ছায়া

আবছায়া

নিবিড় বৃত্তের মধ্যে এলোমেলো ঘুরি, অন্ধকারে লুকিয়ে ছায়া মৌন রেখায় আড়াআড়ি দাঁড়িয়েছো, চেয়ে দেখো— পৃথিবীর কায়া নির্জনে ব্যাসার্ধ থামিয়েছো চোখ, গোপনতা নেই আর চোখের শ্বাসে স্তব্ধ বিন্দু এখনো এঁকে-বেঁকে আমার জন্য জেগে আছে জেনেছি তার পাশে

তাই একাসনে তৃপ্ত রাখি যত লিপ্সা, আর রাতের ভাষা
ততবার নির্মিত করেছি কথামালা যত আঙুলের ফাঁকে
তবুও সংশয়ে যদি ভেঙে পড়ে কথা— কথার অন্তরালে
                জেনে নেবো সবকিছু— ব্যর্থ অনুভবে

রক্তপায়ী

দূরে যাবে না লোহিত রক্ত কণিকায় লবণ বোনা হবে— আমার শরীরে জমুক রক্তের দাগ, আড়ালে পড়ুক ফেটে তুমি কি ভয়ভীতি নিয়ে ছড়িয়েছো কোষে; নাকি তুলে নেবে ঘ্রাণ— রক্তকণিকার ফাঁকে-ফাঁকে। জানি মুখোমুখি হবে সবকিছু লক্ষ্যহীন ভেবে; রক্ত কণিকায় ভেসে যাবে সব জমাট বাঁধা হলে আমি মিশে যাব রক্তকণিকায় নয়; রক্তের ফাঁকে

সন্দেহ

সন্দেহ প্রকট হলে ছায়া মৃদু হাসে খসে পড়ে স্পৃহা ভেষজ মায়াবী আঁচে
ইশারায় বলে যাও কথা পরিধি জেনে
তাই গোপনে যন্ত্রণাগুলো বারবার দোলে


যদি ঈর্ষায় স্পর্শ করো সন্দেহের হাত
অর্ধেক হৃদে তবে ধাবমান কাঁটা
সেই ভয়ে যাহা রচিবে তুলে নেব সব
                                   সময়ের মলাটে

মেঘপ্রবাহ

বাতাস যখন আধিপত্য স্থাপন করে ধুলোর সাথে আমি তখন স্বেচ্ছায় জল ছুঁতে যাই, তীরে রেখে যাই ঘোরলাগা স্বপ্নের অজ্ঞাত কথা। তাই মেঘময়ী খুপির ঠোঁটে যতবার রেখে এসেছি মরমী গূঢ় ততবার জেগে ওঠে গ্রহণের সাধ।কিন্তু স্পর্শটুকু জানা হয়নি;কেন জানি শুকনো ফুলের মধ্যে গন্ধ থাকে না। তবুও যদি কিছু কথা জমা পড়ে থাকে অনিচ্ছায় প্রেরণ করে দিতে পারো জলের ঠিকানায়। যতটুকু আমি জানি বলে দেব,বাকীটুকু জেনে নিও মেঘময়ীর কাছে, দেখো উৎ পেতে আছেন উনি… তিনিই আমাদের মেঘপ্রবাহস্বজন

পাখিপালক

বশেষে যারা চলে গেলো; যে চেয়েছিল— তাদের ছায়াপালকে নির্মাণ করি তৃণ
দেখি ক্ষতচিহ্নগুলো লেগেছে কার গায়

দূরে দাঁড়ালে দেখি দৃষ্টিহীন চোখে
                 স্মৃতি তড়পায়
পুর্নবার ফিরে এলে দেখি—
পাখিপালক তোমার কায়া চৌকাঠে দাঁড়ায়

পূর্ণতার খোঁজে

তোমার আকাঙ্ক্ষা কখনো অপূর্ণ রাখিনি ঠিক যেভাবে তুমিও শিথিল করেছো দেহ
                                               বাঁধা দাওনি
যতটুকু সম্ভব ঠিক ততটুকু নিয়েছো চুষে
কিছুতো কখনো ফেরৎ দাওনি

যারা দেখেছে তাদের চোখ দু’টি বাঁকা
এসব লজ্জার কথা কাউকে না শোনানোই ভালো
ভেবেচিন্তে তুমি যদি আবার পূর্ণতা খোঁজো

বাস্তবতা

চোখে দেখিনি স্বপ্ন-বাস্তবতার মিল অমিল কোথায় জানি না— বাস্তবতা কোন অর্থে দাঁড়ায়
সবাই স্বপ্নকে ভেঙেচুরে দেখে
আমি তো স্থির হয়ে আছি নিজ স্বভাবে

যারা গুনে রাখে বাস্তবতা তাদের স্বপ্ন দেখা মানায়

সবাই বলে এই যা— বাস্তবতা মেনে নিতে হবে
তাই বলে তুমিও কি দূরে চলে যাবে
বাস্তবতা বলতে কিছু নেই; তাই তো হয়েছি স্বজন বিমুখ
চোখের ধারে কাছে যা কিছু দেখি তা তো স্পর্শবিহীন সুখ

বেদনা

দ্রোহতার গানে ফের শুনি জল মালতি
আমাকে নিয়ে নিঃসত্ত্বার কীর্তন করে আপন মনে
অতঃপর জলছায়া তাকিয়ে আছে আলিঙ্গনের ধ্যানে
কিন্তু ছায়া থেকে গভীরতা পরিমাপ না জেনে দিয়েছি সাঁতার
জলপোকা… শ্যাওলা আমাকে জড়িয়ে ধরেছে আর…